ঢাকা ০৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যা করলে প্রিয় নবী (সা.) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১১:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫
  • ৪২৪ বার

প্রতিটি মুসলমানের আশা থাকে, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কে স্বপ্নে দেখার। কারো ভাগ্যে হয় আবার কারো ভাগ্যে হয় না। সত্যিকারের নবী প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদ্গ্রীব হওয়া মুমিনদের নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখার সৌভাগ্য হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার দোজখের আসন গ্রহণ করল।’ –সহিহ বোখারি : ১১০ অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল। আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।’ –সহিহ মুসলিম : ২২৬৬ ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও বুজুর্গরা নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। ইসলামের বিধান হলো, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতো। কেননা শয়তান কখনো নবীজির অাকৃতি ধারণ করতে পারে না। আমাদের জানা দরকার, নবী করিম (সা.) কেমন ছিলেন? কোন আকৃতিতে তাকে স্বপ্নে দেখা যাবে? শামায়েলে তিরমিজির বর্ণনায় নবী করিম (সা.)-এর আকার-আকৃতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে— তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহি। তার গায়ের রঙ দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারার। ঘন দাড়ি। মুখগহবর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি। মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত। বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়ত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়সড়। প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর। চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাঁপড়ি লম্বাটে। ভ্রুযুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন। ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। এ কথা বলতে বাধ্য- জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি।’ নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হবে ঈমান অবস্থায়। পূর্ণ ইসলাম পরিপালনকারী ও সুন্নতের অনুসারীরাই কেবল তাকে দেখতে পাবেন। এছাড়া কেউ নবী করিম (সা.) কে দেখার দাবি করলে সেটা মিথ্যা হবে। মনে রাখতে হবে, যে যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গ লাভে নিজেকে ধন্য মনে করে। তার চালচলন, ভাবভঙ্গি ও বচনাচার অনুকরণ করে। সে নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখে। সবসময় তার সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকে। এভাবেই যুগে যুগে হাজারো নবীপ্রেমিক নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন- ইমাম আবু হানিফা, আবদুর রহমান জামি, জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি। হজরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি, আবদুল আজিজ, শায়খ জাকারিয়াসহ অসংখ্য নবীপ্রেমিক (রহ.)। বর্ণিত আছে, ইমাম মালেক (রহ.) অধিকাংশ রাতেই নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতেন। নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে করণীয় হলো- সত্যিকারের নবী প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদগ্রীব হওয়া। তাহলেই কেবল নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। অজুসহকারে পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা। তবে সর্বাগ্রে যেটা মনে রাখা দরকার তা হলো- ফরজ ইবাদত তার হকসহ পরিপূর্ণভাবে পালন করেই নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা। হে আল্লাহ, আমাদের তৌফিক দাও।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যা করলে প্রিয় নবী (সা.) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব

আপডেট টাইম : ১১:১১:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

প্রতিটি মুসলমানের আশা থাকে, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কে স্বপ্নে দেখার। কারো ভাগ্যে হয় আবার কারো ভাগ্যে হয় না। সত্যিকারের নবী প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদ্গ্রীব হওয়া মুমিনদের নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখার সৌভাগ্য হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার দোজখের আসন গ্রহণ করল।’ –সহিহ বোখারি : ১১০ অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল। আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।’ –সহিহ মুসলিম : ২২৬৬ ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও বুজুর্গরা নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। ইসলামের বিধান হলো, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতো। কেননা শয়তান কখনো নবীজির অাকৃতি ধারণ করতে পারে না। আমাদের জানা দরকার, নবী করিম (সা.) কেমন ছিলেন? কোন আকৃতিতে তাকে স্বপ্নে দেখা যাবে? শামায়েলে তিরমিজির বর্ণনায় নবী করিম (সা.)-এর আকার-আকৃতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে— তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহি। তার গায়ের রঙ দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারার। ঘন দাড়ি। মুখগহবর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি। মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত। বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়ত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়সড়। প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর। চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাঁপড়ি লম্বাটে। ভ্রুযুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন। ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। এ কথা বলতে বাধ্য- জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি।’ নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হবে ঈমান অবস্থায়। পূর্ণ ইসলাম পরিপালনকারী ও সুন্নতের অনুসারীরাই কেবল তাকে দেখতে পাবেন। এছাড়া কেউ নবী করিম (সা.) কে দেখার দাবি করলে সেটা মিথ্যা হবে। মনে রাখতে হবে, যে যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গ লাভে নিজেকে ধন্য মনে করে। তার চালচলন, ভাবভঙ্গি ও বচনাচার অনুকরণ করে। সে নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখে। সবসময় তার সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকে। এভাবেই যুগে যুগে হাজারো নবীপ্রেমিক নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন- ইমাম আবু হানিফা, আবদুর রহমান জামি, জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি। হজরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি, আবদুল আজিজ, শায়খ জাকারিয়াসহ অসংখ্য নবীপ্রেমিক (রহ.)। বর্ণিত আছে, ইমাম মালেক (রহ.) অধিকাংশ রাতেই নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতেন। নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে করণীয় হলো- সত্যিকারের নবী প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদগ্রীব হওয়া। তাহলেই কেবল নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। অজুসহকারে পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা। তবে সর্বাগ্রে যেটা মনে রাখা দরকার তা হলো- ফরজ ইবাদত তার হকসহ পরিপূর্ণভাবে পালন করেই নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা। হে আল্লাহ, আমাদের তৌফিক দাও।